পুরুষদের জন্য ফ্যাশন টিপস্। ফ্যাশন বলতে এককালে শুধু মেয়েদের ফ্যাশনকেই বুঝানো হতো। ফ্যাশনে একচ্ছত্র অধিকার যেন কেবল মেয়েদেরই। কিন্তু যুগ পাল্টেছে,পাল্টেছে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিও। আর বদলেছে ছেলেদের ফ্যাশনের ধারা।
তবে এই ফ্যাশনের জন্য কিন্তু অফিস ছেড়ে মুখে কলা-টক দই মেখে বসে থাকার প্রয়োজন নেই মোটেই, বরং সব কাজের মাঝে বুদ্ধি করে পোশাক আর এর সাথে মিলিয়ে অন্যান্য অনুষঙ্গ ঠিক করে নিন তাহলেই আপনি হয়ে উঠবেন ফ্যাশনেবল।
ফ্যাশনে শার্ট
ছেলেদের ফ্যাশনের মধ্যে টি শার্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় , বিশেষ করে কম বয়সের ছেলেদের জন্য। যখন কোথাও ঘুরতে যাবেন বা বিশেষ কারো সাথে কিছু সময় কাটাতে পছন্দ করবেন তখন একটু দ্বিধায় পরে যান কি পরবেন । যদিও এটা যার যার পছন্দের ওপর নির্ভর করে তবুও অনেকেরই বেশি প্রিয় পুরোপুরি কালো শার্ট। মেয়েরাও ছেলেদের কালো শার্টে বেশি পছন্দ করে । কালো ছাড়াও নিজ নিজ গায়ের রং অনুযায়ী পছন্দ মত ফুল শার্ট পছন্দ করতে পারেন । হাফ শার্ট থেকে ছেলেদের ফুল শার্টে বেশি ভাল দেখা যায়।
যারা নিয়মিত স্যুট পরেন তারা স্যুটের রঙের ওপর নির্ভর করে শার্ট পরবেন। স্যুট গাঢ় রঙের হলে শার্ট পরবেন হাল্কা রঙের। গরমের সময় স্যুট পরতে না চাইলে শর্ট শার্ট, ফতুয়া এবং জিন্স পরতে পারেন।
জুতা
ছেলেদের ফ্যাশন অ্যাকসেসরিজ হিসেবে প্রথমেই আসে জুতার প্রসঙ্গ।আর এখন স্যান্ডেলের ট্রেন্ড হিসেবে একটু পা ঢাকা স্যান্ডেলের চলই বেশি। শার্টের সাথে মিলিয়ে পড়তে পারেন সামনের দিকে গোলাকার শু বা একটু চৌকানো শু। রং কালো বা হালকা মেরুন হতে পারে।
এছাড়া হালকা ডিজাইনের নানা স্যান্ডেল পরতে পারেন পাঞ্জাবীর সাথে। পাঞ্জাবির সাথে পড়বার উপযোগী পাতলা সোল এর ডিজাইন করা স্যান্ডেলেরও কাটতি রয়েছে কমবেশি। এছাড়া যারা জিন্স দিয়ে হাই শোল্ডার পাঞ্জাবী পড়বেন তারা এর সাথে পড়তে পারেন বাহারী ডিজাইনের স্নিকার্সও।
ছেলেদের এইসব স্টাইলিশ জুতার জন্য প্রথমেই ঢুঁ মারা যেতে পারে বসুন্ধরা সিটিতে। বর্তমানে এখানেই রয়েছে বাটা এবং এপেক্স এর সবচেয়ে বড় দু’টি শোরুম। সেই সাথে অন্যান্য শোরুম তো রয়েছেই। পুরুষদের জন্য ফ্যাশন টিপস্।
বেল্ট
জুতার পর ছেলেদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো বেল্ট। বিশেষ করে যারা একটু ওয়েস্টার্ন লুকে নিজেদের ফুটিয়ে তুলতে চান তাদের ক্ষেত্রে বেল্ট কিংবা কোমরবন্ধনীটি স্মার্ট কিংবা স্টাইলিশ হওয়াই বাঞ্চনীয়। আর এ জাতীয় স্টাইলিশ বেল্টের জন্য ঢুঁ মারতে পারেন এক্সটেসি, সোল ড্যান্স কিংবা ডিজেল এর মতো ফ্যাশন আউটলেটগুলোতে।
চুল-দাড়িতে ফ্যাশন
যারা ক্যাজুয়ালি চুল কাটেন তারা মাসে দুবার চুল কেটে শেইপ ঠিক রাখুন। আর যারা চুল ছোট রাখেন তারা প্রতিদিন চুলে জেল লাগিয়ে চুলগুলোকে গুছিয়ে রাখুন। আর আপনি যদি চুল লম্বা রাখতে চান তবে একটু ভেবেচিন্তে নিন। কারণ লম্বা চুলে সবাইকে মানায় না।
আবার যাদের চেহারার গঠন লম্বাটে কিংবা পান আকৃতির তাদের চুল লম্বা রাখলে ভালো দেখায়। যাদের গায়ের রঙ কালো তাদের লম্বা চুল মোটেও ভালো লাগে না। যাদের লম্বা চুল তারা সব সময়ে পোশাকের সঙ্গে মানানসই গার্ডার দিয়ে চুল বেঁধে রাখুন। আর মাঝেমধ্যে চুলের আগা ছেঁটে দিন। সপ্তাহে অন্তত দুদিন শ্যাম্পু করে চুল পরিষ্কার রাখুন।
যারা ক্লিন শেভে অভ্যস্ত তারা প্রতিদিন সেভ করে আফটার সেভ লোশন দিডে মুখটা ম্যাসাজ করে নিন। যারা দাড়ি রাখেন তারা সপ্তাহে নিয়ম করে দাড়িগুলো সাইজ করে নিন এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন।
চুলের স্টাইল, পোষাক, জুতো, রোদচশমা ইত্যাদি সব ব্যাপারেই ছেলেরা এখন আগের চাইতে অনেক বেশি সচেতন। ছেলেদের ফ্যাশন ইণ্ডাস্ট্রিও এখন সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই কোন ছেলে যদি ফ্যাশনেবল হতে চায়, তাহলে তাকে কিছু বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। যেমন, কোন জিনিসগুলো তার সাথে মানায় কিংবা কোন ধরণের পোষাক পরলে তাকে ভালো দেখাবে এই বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে।
যে বিষয়গুলো অবশ্যই মেনে চলবেন
- বাইরে কোথাও কারো সঙ্গে অ্যাপয়েনমেন্ট থাকলে অবশ্যই শেভ করে যাবেন। যাদের দাড়ি আছে তারা ঠিকমতো ছেঁটে পরিপাটি হয়ে যাবেন। কেননা এ বিষয়টি আপনার স্মার্টনেস অনেকখানি বাড়িয়ে দেবে।
- হেয়ার কাটিংয়ের জন্য দেখে-শুনে একজন ভালো হেয়ার ড্রেসার নির্বাচন করুন। আপনার চেহারা, ফিগার এবং ইচ্ছার সঙ্গে মানানসই রেখে যেন কাজটি সমাধা হয়। প্রয়োজনে অন্যের সাহায্য নিতে পারেন। নিয়মিত ব্যবধানে চুল কাটুন। এ ক্ষেত্রে ৪-৬ সপ্তাহ অন্তর হেয়ারকাট দেয়াই ভালো। মনে রাখবেন, আপনার আউটলুকিংয়ের ক্ষেত্রে চুল বড় একটা স্থান দখল করে আছে। পুরুষদের জন্য ফ্যাশন টিপস্।
- ছেলেরা সাধারণত একাকী এবং দীর্ঘ সময় নিয়ে শপিং করতে পছন্দ করে না। ফলে পোশাকের ব্যাপারে পড়তে হয় বেশ ঝামেলায়। এ ক্ষেত্রে যা করণীয় তা হচ্ছে, কোনো কিছু চিন্তা না করেই একটা বড় শপিং মলে ঢুকে পড়ুন। সেখানে রাখা বাহারি ডিজাইনের মধ্য থেকে আপনার ব্যক্তিত্ব, ফিগার এবং চেহারার সঙ্গে মানানসই পোশাকটি নির্বাচন করুন। এক সঙ্গে অনেক পোশাক না কেনাই ভালো। কারণ স্টাইল এবং ফ্যাশন দ্রুত পরিবর্তিত হয়। তবে এমন কিছু পোশাক আছে যা কখনো পুরনো হয় না। এ ধরনের পোশাকও কিছু কিনে রাখতে পারেন।
- প্রতি মাসে অন্তত একবার নাক এবং কানের লোম পরিষ্কার করুন।
- পোশাকের সঙ্গে মানানসই বেল্ট এবং জুতা নির্বাচনে সতর্ক থাকুন। এ দুটি পরিচ্ছদ অনেক ক্ষেত্রে মানানসই হয় না। ফলে পরিহিত দামি পোশাকটি অর্থময় হয়ে ওঠে না। তবে কালো এবং বাদামি রঙের জুতা-বেল্ট পরিবর্তন করে ব্যবহার করলে এ ঝামেলা এড়ানো যায়।
- রঙিন পোশাক ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক হোন। এমন কোনো রঙের পোশাক ব্যবহার করবেন না যাতে আপনার ব্যক্তিত্ব নষ্ট হয়ে যায়। কথায় আছে, খাবার খাবেন নিজের পছন্দের আর পোশাক পরবেন অন্যের পছন্দের। প্রয়োজনে এ বিষয়ে বন্ধু-বান্ধব কিংবা কোনো শুভাকাঙ্ক্ষীর সাহায্য নিতে পারেন।
- পারফিউম ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক হোনে। ছেলেদের জন্য আফটার শেভ লোশন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দামি হলেও চেষ্টা করুন ভালো মানের পণ্যটি ব্যবহার করার। এছাড়া ঋতুভেদে ভিন্ন ভিন্ন বডি স্প্রে, সেন্ট ইত্যাদি ব্যবহার করুন।
যে বিষয়গুলো এড়িয়ে চলবেন
- একই গেটআপের ক্ষেত্রে কালো এবং বাদামি রঙের পোশাক এক সঙ্গে ব্যবহার করবেন না। কারণ কালো জুতার সঙ্গে বাদামি রঙের বেল্ট অথবা বাদামি কোটের সঙ্গে কালো জুতা পরলে পরস্পর দ্বন্দ করতে পারে মানে খুব চোখে লাগে এই কম্বিনেশন্টা। প্রয়োজনে সবকিছুই কালো অথবা সবকিছুই বাদামি রঙের পরতে পারেন।
- পরিহিত পোশাক যেন খুব বেশি ঢিলেঢালা না হয় এ ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন।
- কথা বলার সময় মুখে দুর্গন্ধ থাকলে কেউ আপনাকে সমীহ করবে না। কেননা এটি অত্যন্ত খারাপ একটি ব্যাপার। এ সমস্যা থেকে দূরে থাকার জন্য প্রতি ৬ মাসে অন্তত একবার ডেন্টিস্টের পরামর্শ নিন। দিনে অন্তত ২ বার ব্রাশ করুন। পার্টি কিংবা মিটিংয়ের আগে মাউথ ফ্রেশনার ব্যবহার করুন। প্রয়োজনে আপনার গাড়ি অথবা অফিসের ডেস্ক ড্রয়ারেও মাউথওয়াশ রাখতে পারেন।
- পরিহিত পোশাক যেন ৩টির বেশি রঙ ধারণ না করে সেদিকে খেয়াল রাখুন। জুয়েলারি ব্যবহারের ক্ষেত্রেও এ ধরনের সতর্কতা বজায় রাখুন।
- একই স্টাইল দিনের পর দিন ব্যবহার করবেন না। সময়ের সঙ্গে নিজের স্টাইলকে বদলান। কেননা আপনি না বদলালেও দেখবেন আপনার পাশের জন বদলেছেন। সে ক্ষেত্রে আপনি পিছিয়ে পড়বেন।