Google Add Code Here
মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত সন্দেহে এবার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সহকারী পরিচালক ওমর সিরাজসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গতকাল শুক্রবার সকালে এই পরীক্ষা চলার সময় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ইউজিসি ভবনে অভিযান চালায় র্যাব। ওই সময় ইউজিসি কার্যালয়ে ওমর সিরাজের কক্ষে তল্লাশি চালিয়ে প্রশ্নপত্রসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। র্যাব কর্মকর্তারা বলেছেন, চক্রটি ব্লুটুথ মাস্টারকার্ডসহ কিছু ডিভাইস ব্যবহার করে পরীক্ষাকেন্দ্রে উত্তর সরবরাহ করছিল। চক্রটি কৃষি অফিসার ও সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষার জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত বলেও দাবি র্যাব কর্মকর্তাদের।
মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র জালিয়াতির অভিযোগে এর আগে মহাখালী থেকে আটক করা চারজনকে গত বৃহস্পতিবার একটি মামলায় চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম গতকাল সকালে ভর্তি পরীক্ষাকেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের নামে একটি চক্র মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অথচ দেখা গেছে, এসব প্রশ্নপত্র পুরোটাই ভুয়া। এর সঙ্গে আসল প্রশ্নের কোনোই মিল নেই। তবে যে চক্রটি এমন কাজে জড়িত তাদের বের করা হয়েছে। তারা সফল হতে পারেনি। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জানান, গতকাল সকালে ইউজিসি কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় অভিযান চালিয়ে ওমর সিরাজ এবং তাঁর সহযোগী রেজাউল করিম ও ইশান ইমতিয়াজ হৃদয়কে আটক করা হয়েছে।
ইউজিসির সহকারী পরিচালক সিরাজ প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁর কক্ষ থেকে আলামতও উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি প্রশ্নপত্র ফাঁসের কাজটি সহজে করার জন্য সম্প্রতি চীন থেকে একটি অত্যাধুনিক মেশিনও এনেছেন। মুফতি মাহমুদ খান আরও জানান, ওমর সিরাজ কৃষি ব্যাংকের অফিসার নিয়োগ, জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের সহকারী জজ নিয়োগসহ বেশ কয়েকটি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত বলে তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁর কাছ থেকে গত বছরের সহকারী জজ পরীক্ষার ২৩টি উত্তরপত্র, দুটি প্রশ্নপত্র, দুই লাখ টাকা, সরকারি দপ্তরের সিল ও চেক উদ্ধার করা হয়। গতকালের পরীক্ষায় চারজনকে প্রশ্নপত্র দেওয়ার কথা ছিল তাঁদের। র্যাব বিষয়টি বুঝতে পেরে বেশ কিছুদিন ধরে তাঁর ওপর নজরদারি করছিল। র্যাব কর্মকর্তারা জানান, ওমর সিরাজ এই চক্রের মূল হোতা। তিনটি ধাপে তাঁরা প্রশ্নপত্র জালিয়াতি করেন। প্রথম ধাপের ব্যক্তি পরীক্ষার্থী হয়ে কেন্দ্রে ঢুকে বাইরে প্রশ্নপত্র বের করে দেয়।
দ্বিতীয় ধাপে এই প্রশ্নের উত্তর তৈরি করে সিরাজকে তা সরবরাহ করে। রেজাউল ও হৃদয় এই কাজটি করছিল। তৃতীয় ধাপে সিরাজ ও তাঁর সহযোগীরা চীন থেকে আনা মাস্টারকার্ড ও ব্লুটুথের মাধ্যমে উত্তর পাঠান। পরীক্ষার্থী কানের কাছে লাগানো ছোট আকারের ডিভাইসে উত্তর শুনে খাতায় লেখেন। ইশান ২০১০ সালে এইচএসসি পাস করেন। রেজাউল করিম জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের স্টোরকিপার ছিলেন। তবে চাকরিচ্যুত হয়েছেন। সহকারী জজ পরীক্ষায় পরে উত্তরপত্র জমা দিয়েও জালিয়াতি করেন রেজাউল। ওমর সিরাজের স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন একই উপায়ে পরে উত্তরপত্র জমা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। র্যাব কর্মকর্তারা আরো জানান, মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার জন্য ১৫ লাখ, কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তার জন্য ছয় লাখ এবং সহকারী জজের জন্য ১০ লাখ টাকা করে নিত চক্রটি। ইউজিসির উপসচিব (জনসংযোগ) মো. ওমর ফারুখ জানান, গতকাল অফিস বন্ধ থাকলেও র্যাবের অভিযানের খবর পেয়ে তাঁরা অনেকেই ছুটে যান। র্যাব ইউজিসির কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেনি। বিষয়টি তাঁদের কাছে এখনো স্পষ্ট নয়।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে মহাখালী ডিওএইচএস থেকে মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র জালিয়াতির অভিযোগে চারজনকে আটক করেছিল র্যাব। তাদের কাছ থেকে ৩৮ হাজার টাকা এবং এক কোটি ২১ লাখ টাকার চেক উদ্ধার করা হয়েছিল। মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা হয়েছে সুষ্ঠুভাবে: এদিকে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সের ভর্তি পরীক্ষা গতকাল সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। একযোগে দেশের ২৩টি কেন্দ্রের ৪৫টি ভেন্যুতে এ পরীক্ষায় মোট ৮৪ হাজার ৭৮৪ জনের অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও কিছুসংখ্যক আবেদনকারী পরীক্ষাকেন্দ্রে উপস্থিত হননি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এ পরীক্ষা চলে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও পরিচালক (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল হান্নান প্রতিবেদককে বলেন, এবার সরকারি ৩০টি ও বেসরকারি ৬৫টি মিলিয়ে মোট ৯৫টি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ৯ হাজার ২১২টি এবং সরকারি ৯টি, বেসরকারি ২৪টি ডেন্টাল কলেজ ও ইনস্টিটিউটের বিডিএস কোর্সের এক হাজার ৮৭৭টি আসনের বিপরীতে মোট ৮৪ হাজার ৭৮৪ জন ভর্তীচ্ছু আবেদন করেছিলেন। তবে কিছু আবেদনকারী অংশ নেননি। আর পরীক্ষা অত্যন্ত সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়েছে। বাইরের কোনো ঘটনা বা গুজব পরীক্ষার ওপর কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি।